
– সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চবি প্রতিনিধি
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মূল্যবোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবী এবং সংগীত ও ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামী শিক্ষকের কোটা বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন করা হয়।
সাবেক সচিব জনাব নূরুল আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মূল্যবোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন মূল্যবোধ আন্দোলনের মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত, খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমান, দাওয়াতুল ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক মুফতী মুজীবুর রহমান কাসেমী এবং মূল্যবোধ আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ।
মূল্যবোধ আন্দোলনের মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে সরকার একদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবীকে উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা প্রদান করেছে, অন্যদিকে কোটার ভিত্তিতে তৃতীয় লিঙ্গ তথা ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জন্মগত লিঙ্গ প্রতিবন্ধী বা হিজড়াদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নাই। কিন্তু, অসংজ্ঞায়িত ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ কোটার মাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বা সমকামীদের সুযোগ প্রদান করা হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি এবং অবিবেচনাপ্রসূত এই সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় ভয়াবহ সংকট বিদ্যমান। ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের-
ক. ১০.২৮% ছেলে ও ৮.৭১% মেয়ে বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না।
খ. ১৩.৬২% ছেলেমেয়ে এক অঙ্কের সংখ্যা পর্যন্ত চিনতে অক্ষম।
গ. ১৬.৭৮% ছেলে ও ১৫.২২% মেয়ে ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না।
এই ভয়াবহ চিত্র প্রমাণ করে যে, প্রাথমিক স্তরে মৌলিক শিক্ষা বাংলা, ইংরেজি ও গণিত অর্জনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ এই অবস্থায় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে।’
মূল্যবোধ আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ বলেন, ‘৬ অক্টোবর ২০২৪ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম মিলন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়। বিগত একবছরেও সরকার এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অথচ সাম্প্রতিক গেজেট অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে ১% কোটা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ প্রার্থী তথা সমকামীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, মৌলিক শিক্ষায় যখন ভয়াবহ ঘাটতি, তখন সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শিক্ষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক জাতীয় স্বার্থবিরোধী। উল্লেখ্য, ইসলামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ৯২% মুসলিমের ট্যাক্সের টাকায় তাদের সন্তানদের বাধ্যতামূলকভাবে সংগীতের নামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শেখানো রাষ্ট্রের উগ্র ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতারই বহিঃপ্রকাশ।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নেই। অথচ সংগীতের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ স্পষ্টতই জাতীয় চাহিদা ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তৃতীয় লিঙ্গ কোটার মাধ্যমে, যার আইনগত সংজ্ঞাও এখনো অস্পষ্ট, শিক্ষাব্যবস্থায় সমকামিতার মতো সামাজ ও ঈমানবিধ্বংসী এজেন্ডার অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দ্বন্দ্ব ও বিভাজন তৈরি করবে।
মূল্যবোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন দাবি জানিয়ে আরো বলেন,
‘১. প্রাথমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
২. ইসলামিক শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
৩. দেশের ৬৫ হাজার ৫০০ এর বেশী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে মৌলিক বিষয়গুলিতে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।
৪. সরকারি নিয়োগে বিতর্কিত তৃতীয় লিঙ্গ কোটা বাতিল করা হোক।
জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের স্বার্থে অবিলম্বে এই দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আলেম সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পেশাজীবীদের হাতে ‘শেখার কথা সালাত-সিয়াম, শেখায় তবলা-হারমোনিয়াম’, ‘আসল শিক্ষার নাই ভিত, প্রাথমিকে কেন সংগীত?’, ‘শিক্ষক যখন সমকামী, সমাজ তখন অধঃগামী’, ‘হিজড়া হওয়া আসমানী, তৃতীয় লিঙ্গ শয়তানী’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় লিঙ্গ বা সমকামী শিক্ষক আর গানের টিচার নিয়োগের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ এবং সুযোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনটি সমাপ্ত হয়।