
প্রহরী ডেস্ক, ১৩ আগস্ট ২০২৫
আজ ১৩ আগস্ট ২০২৫, বুধবার, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (OHCHR) বাংলাদেশ অফিস প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে এক প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তাঁরা বলেন, OHCHR-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতা, অপ্রমাণিত অভিযোগ দায়ের এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে, এবং সেজন্য শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ অফিস প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিস স্থাপনের ঘোষণায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্ব, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসগঠনের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।” তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, “যদিও মানবাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবুও জাতিসংঘের ‘মানবাধিকার’ ধারণা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। পূর্বে দেখা গেছে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক অফিসগুলো পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে — যেমন এলজিবিটিকিউ প্লাস (LGBTQ+), ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড, গর্ভপাতের বৈধতা ইত্যাদি। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এসব বিষয় আমাদের পাঠ্যক্রমে চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজে বিভ্রান্তি ও সংকট তৈরির যৌক্তিক শঙ্কা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।”
সমাবেশে আরো বলা হয়, “বিশ্বের যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস রয়েছে, সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ। উপরন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণের মতামত ও জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী। আমরা মনে করি, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের মতামত, ধর্মীয় নেতৃত্ব, জাতীয় সংসদ ও শিক্ষাবিদদের সাথে পরামর্শ করা উচিত ছিল। দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি-সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।”
শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিম্নলিখিত সম্ভাব্য ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরেন:
১. LGBTQ+ এজেন্ডার প্রসার — স্কুল-কলেজে লিঙ্গ পরিবর্তনের অধিকার প্রচার, শিক্ষানীতিতে LGBTQ+ বিষয় অন্তর্ভুক্তি, এবং এর বিরোধিতা করলে আইনি শাস্তি।
২. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব হাইজ্যাক — বিদেশি নজরদারি ঘাঁটির মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক আড়ালে গোয়েন্দা কার্যক্রম।
৩. বিচার ব্যবস্থায় বিদেশি প্রভাব — আন্তর্জাতিক রিপোর্ট ও সুপারিশের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় চাপ সৃষ্টি।
৪. অর্থনৈতিক নির্ভরতা বৃদ্ধি — বিদেশি অনুদান ও শর্তনির্ভর নীতি প্রণয়ন।
৫. সাধারণ ধর্মচর্চাকারী মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন — ‘জঙ্গিবাদ দমন’-এর নামে ধর্মচর্চাকারী মুসলিমদের ওপর চাপ ও নিপীড়ন; নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে কটুক্তি করার সুরক্ষা।
৬. সাংস্কৃতিক আগ্রাসন — গ্লোবাল ভ্যালুজ চাপিয়ে স্থানীয় ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবমূল্যায়ন; ধর্মীয় পারিবারিক আইন বাতিল, ‘ম্যারিটাল রেইপ’ আইন, এবং যৌনকর্মীদের পেশা স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি।
শিক্ষার্থীদের দাবি:
১. অনতিবিলম্বে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের অনুমোদন বাতিল করতে হবে।
২. জনগণের মতামত ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস স্থাপন করা যাবে না।
৩. দেশের সার্বভৌমত্ব, মূল্যবোধ ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সর্বশেষে, তাঁরা বলে, “একাধিকবার সরকারকে এই ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েও কর্ণপাত পাইনি। অতএব, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানাতে চাই, অনতিবিলম্বে যদি জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বাতিল না করা হয়, তাহলে দেশের স্বার্থ রক্ষায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ধারাবাহিক কঠোর কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবো।ʼʼ
বার্তা প্রেরণকারী:
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ
তারিখ: ১৩ আগস্ট, ২০২৫ (বুধবার)